মুখচোরা বা লাজুক মানুষদের আমরা সবাই একটু অন্যরকম দৃষ্টিতে দেখি। মনে করি অন্যদের
তুলনায় তাদের প্রতিভা হয়তো কম, তারা সবার সাথে মিশতে পারেন না, তাদের
নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে। কিন্তু আমরা আসল ব্যাপারটাই জানি না। আমরা সবাই
তো জীবনে কোনো না কোনো সময় একটু মুখচোরাই ছিলাম। নতুন কারও সাথে মিশতে
গেলে, চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেলে আমাদেরও একটু সংকোচ এসে পড়ে। এমন মুখচোরা
মানুষদেরই কিন্তু আছে জীবনে সফল হবার গোপন কিছু মূলমন্ত্রও। তাদেরকে তুচ্ছ
করে না দেখে আমাদের উচিত তাদের থেকে শিক্ষা নেওয়া।
তাদের চিন্তাধারা হয়ে থাকে উন্নত
মুখচোরা মানুষেরা অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করে থাকেন। চিন্তা করেন নিজেকে
নিয়েও। অন্যদের থেকে দূরে থাকার কারণে তারা অনেক গভীর চিন্তা করতে সক্ষম।
এই প্রযুক্তির যুগে আমাদের অনেকেরই চিন্তাশক্তি অনেক কমে গেছে। আমরা এতই
নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি বিভিন্ন যন্ত্রের ওপরে যে আমাদের চিন্তাশক্তির বিকাশ
ঘটছে না খুব একটা। লাজুক মানুষের চিন্তাশক্তি এ কারণে আমাদের চাইতে অনেক
বেশি এবং কার্যকরী। তাই তাদের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতাও হয় ভালো।
তারা সবকিছু মন দিয়ে শোনেন
অনেকজন মানুষ মিলে আড্ডা দিচ্ছেন। আপনি এবং অন্য বন্ধুরা ক্রমাগত বকবক
করেই যাচ্ছেন। কথা অর্ধেক শুনছেন অর্ধেক শুনছেন না। আড্ডা শেষে হয়তো
কথোপকথনের বেশিরভাগটাই আপনার মনে থাকবে না। কিন্তু এই সমস্যা থেকে মুক্ত
হলেন মুখচোরা মানুষেরা। তারা খুব মন দিয়ে সবকিছু শোনেন। একদম খুঁটিনাটি
বিষয়গুলোও তাদের খেয়াল এড়ায় না। এ কারণে তারা অনেক সময়েই হয়ে থাকেন কাজের
ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের চাইতে বেশি কার্যকরী।
তারা অনেক কিছু পর্যবেক্ষণ করেন
অনেক ছোট্ট একটা ব্যাপার, যা আপনার চোখ এড়িয়ে গেল কারণ আপনি চিন্তা
করছেন অন্য কিছু নিয়ে। একজন মুখচোরা মানুষ কিন্তু তা ঠিকই খেয়াল করবে। একটা
ঘরে তাকে বসিয়ে রাখলে তিনি এমন অনেক কিছু খেয়াল করবেন যা আমাদের চোখ এড়িয়ে
যেতে বাধ্য। অন্যদের অনুভূতি লক্ষ্য করার ক্ষেত্রেও তাদের তুলনা হয় না। এ
কারণে সামাজিক পরিস্থিতিতে কিন্তু তারা সাধারণ মানুষের চাইতে বেশি সফল হয়ে
থাকেন।
তারা আত্মসচেতন
মুখচোরা মানুষ কেন অন্যদের সাথে অস্বস্তি বোধ করেন? এর মূল কারণ হলো,
তারা নিজেদের নিয়ে সংশয়ে থাকেন বেশিরভাগ সময়। অন্যরা তাকে নিয়ে কী ভাবছে, এ
নিয়ে তারা চিন্তা করে থাকেন অনেক বেশি। এ ব্যাপারটা কিন্তু সব সময়ে খারাপ
নয়। বরং এই আত্মসচেতনতাকে ব্যবহার করে তারা নিজেকে আরও উন্নত করে গড়ে তুলতে
পারেন।
চিন্তা করেন ঝড়ের বেগে
একজন মুখচোরা মানুষ অন্যদের সাথে বসে থেকে উসখুস করেন অনেক বেশি, আঙ্গুল
ফোটান, চুলে হাত দেন, পা নাড়াতে থাকেন। এর কারণ হলো তাদের গভীর
চিন্তাভাবনা। তাদের মাথায় ঝড়ের বেগে চিন্তা চলতে থাকে বলেই তাদের শরীরের
কোনো অঙ্গ এভাবে নাড়াচাড়া করার প্রবণতা দেখা যায়। এতে আসলে তাদের
চিন্তাধারার উপকারই হয়।
তারা সবসময় কিন্তু অন্তর্মুখী নন
একজন মানুষ মুখচোরা বলেই যে তিনি অন্তর্মুখী হবেন তা কিন্তু নয়। বরং
একটু চেষ্টায় তারা হয়ে উঠতে পারেন অনেকটা বন্ধুত্বপূর্ণ। তাদেরকে
অন্তর্মুখী ধরে নেবার ফলে তাদের কিন্তু একদিক দিয়ে সুবিধাই হয়। আমরা
তাদেরকে আন্ডারএস্টিমেট করে থাকি অনেক ক্ষেত্রে এবং সেই সুযোগটি তারা
ভালভাবেই ব্যবহার করে থাকেন।