নাট্যাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য স্বপ্নদল সম্মাননায় ভূষিত হচ্ছেন অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার । আগামী ৯ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে গুণী এই অভিনেত্রীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে। মঞ্চে এবং টেলিভিশনে অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি আমাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।
স্বাধীনতা উত্তরকালে টিভি ও মঞ্চে সমান সফলতার সাথে অভিনয় করে আসছেন। বিটিভির ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তকের ‘হুরমতি চরিত্রে অভিনয় করে তিনি বিপুল প্রশংসা লাভ করেন।
ফেরদৌসী মজুমদারের জন্ম বরিশালে হলেও তিনি বেড়ে উঠেছেন ঢাকাতে।তাঁর বাবা খান বাহাদুর আব্দুল হালিম চৌধুরী ছিলেন ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর ভাইবোন ছিল মোট ১৪ জন যাদের মধ্যে ৮ জন ভাই এবং ৬ জন বোন।সবচেয়ে বড় ভাই কবীর চৌধুরী এবং মেজ ভাই শহীদ । ফেরদৌসী মজুমদারের পরিবার ছিল খুব রক্ষণশীল।বাড়িতে সাংস্কৃতিক চর্চা ছিল নিষিদ্ধ।তাঁর লেখাপড়া শুরু হয় নারী শিক্ষা মন্দির স্কুল থেকে।এই স্কুলে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার পর তিনি ভর্তি হন মুসলিম গার্লস স্কুলে যেখান থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। তারপর ইডেন কলেজে ভর্তি হন।
ইডেন কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় তিনি তাঁর বড় ভাই মুনীর চৌধুরীর কাছ থেকে প্রস্তাব পান একটা নাটকে রোবটের চরিত্রে অভিনয় করার যার নাম ছিল ‘ডাক্তার আবদুল্লাহর কারখানা’। এটি লিখেছিলেন শওকত ওসমান এবং মঞ্চস্থ হয়েছিল ইকবাল হলে যা এখন জহুরুল হক হল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তিনি পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘দন্ড ও দন্ডধর’ নাটকে অভিনয় করেন তাঁর শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিপরীতে।তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা নাটকের ফোরামে তিনি জড়িয়ে পড়েন । ফেরদৌসী মজুমদার নীলিমা ইব্রাহিমের লেখা ‘তামসি’ নামক নাটকে অভিনয় করেন। তিনি ১৯৭০ সালের ১৩ই জুন রামেন্দু মজুমদারকে বিয়ে করেন।
১৯৭২ সালে ‘থিয়েটার’ গঠন করা হয়, যেখানে ছিল আবদুল্লাহ আল মামুন, রামেন্দু মজুমদার প্রমুখ। ফেরদৌসী মজুমদার সেই দলে যোগ দেন।তিনি মোট ২টি সিনেমায় অভিনয় করেন [মায়ের অধিকার’ এবং ‘দমকা’। বাংলাদেশ টেলিভিশনের তিনি প্রায় তিনশ’র মতো নাটক করেন।তাঁর অভিনয় জীবন প্রায় তিন দশকের মতো দীর্ঘ। আবদুল্লাহ আল মামুন ফেরদৌসী মজুমদারকে নিয়ে একটি ৮৬ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন যার নাম ‘জীবন ও অভিনয়’ । তিনি ঢাকার উইল্স্ লিট্ল্ ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষয়িত্রী ছিলেন। খ্যাতিমান অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার তার স্বামী।
ফেরদৌসী মজুমদার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক -
কোকিলারা, এখনো ক্রীতদাস, বরফ গলা নদী, জীবিত ও মৃত, বাঁচা, অকুল দরিয়া, যোগাযোগ, সংশপ্তক, চোখের বালি, নিভৃত যতনে, শংখনীল কারাগার, এখনও দুঃসময়, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়।